সুনামগঞ্জ , শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫ , ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সীমান্তে তৎপর বিজিবি : এক বছরে ৪২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত জামালগঞ্জে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির শীতবস্ত্র বিতরণ ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব আলোকিত সুনামগঞ্জ মানবিক সংগঠনের বৃত্তি বিতরণ মধ্যনগরে ৭৯ বস্তা চিনি ও নৌকা জব্দ ধর্মপাশায় মাছ লুটের ঘটনায় মামলা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শ্রমিক-মালিকের কোনো বৈষম্য থাকবে না : জেলা জামায়াত আমীর ধান-চাল সংগ্রহ সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত গাঁজা-ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৪ সীমান্তে ২ ভারতীয় নাগরিক আটক হাওরে বোরো আবাদের ধুম সংস্কার হচ্ছে ছাতক-সিলেট রেলপথ জামালগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন জাতীয় পার্টির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত দেশের প্রত্যেকটা আন্দোলন-সংগ্রামকে সফল করেছে ছাত্রদল পাথারিয়া ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বিশ্বম্ভরপুরে বিএনপি’র আনন্দ মিছিল মাইজবাড়িতে ‘ভাইয়াপি রোয়া উৎসব’ বছরের প্রথম দিনে মিলেনি নতুন বই খালি হাতে ফিরেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী
সরকারি টাকায় লাভ হচ্ছে ইজারাদারের

হাওরে মাছের অভয়াশ্রম ও বিল নার্সারির সুফল মিলছেনা

  • আপলোড সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:২৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:২৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
হাওরে মাছের অভয়াশ্রম ও বিল নার্সারির সুফল মিলছেনা
বিশেষ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের হাওরে মৎস্য অভয়াশ্রম ও বিল নার্সারি করে কোনও সুফল মিলছেনা। ব্যাহত হচ্ছে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। একদশক আগে ভুয়া অভয়াশ্রম প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা অপচয়ের পর এখন ‘বিল নার্সারি’ স্থাপন করে সরকারি টাকায় জলমহালের ইজারাদারদের জলাশয়ে মাছ বৃদ্ধির অভিনব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইজারাদারের জলমহালের অভ্যন্তরেই ‘বিল নার্সারি’ প্রতিষ্ঠা করে সরকারি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মৎস্য বিভাগ। প্রতি বছর ‘অভয়াশ্রম’ ও ‘বিল নার্সারি’ রক্ষণাবেক্ষণের নামে সরকারি বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছেনা বলে মৎস্যজীবী ও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ আছে। সুনামগঞ্জে গত যুগে বিল নার্সারি বাবত বিপুল টাকা ক্ষতি হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় একযুগ আগে হাওরে মাছ বৃদ্ধির জন্য কিছু এলাকায় মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিল সরকার। প্রথমে মৎস্যবিভাগ স্থানীয় সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে প্রহরী নিয়োগ করে এগুলো বাস্তবায়ন করতো। সরকারিভাবে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করে প্রতিটিতে ৫জন প্রহরী ও একজন করে সুপার ভাইজার নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে মাসিক ১২-১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো। পরবর্তীতে ‘দ্বিতীয় মৎস্য চাষ প্রকল্প, ৪র্থ মৎস্যচাষ প্রকল্প, ও হাওরে মৎস্যচাষ প্রকল্প’ নামে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে ২০১০ পর্যন্ত একই প্রক্রিয়ায় অভয়াশ্রম পরিচালনা করা হয় কাগজে কালমে। এসব প্রকল্পের পুরো বরাদ্দই লোপাট হয়। ২০১০ সনের পর এই প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত অভয়াশ্রম প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে অধিকাংশ অভয়াশ্রমেরই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু অভয়াশ্রম রয়ে যায়। বর্তমানে এরকম ১৫টি অভয়াশ্রম আছে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে। এই অভয়াশ্রমগুলো বাৎসরিক কিছু থোক বরাদ্দ দিয়ে রাজস্ব খাত থেকে চালু রাখা হয়েছে। হাওরে বিলুপ্ত ও সংকটাপন্ন মিঠাপানির মাছ ফিরিয়ে আনতে অভয়াশ্রম প্রকল্পের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। মৎস্যজীবী, কৃষক ও স্থানীয় অভিজ্ঞজনদের অভিযোগ মৎস্যবিভাগের সংশ্লিষ্টরা দুষ্টচক্রের সঙ্গে আতাত করে অভয়াশ্রমের বিপুল বরাদ্দ নিজেরা লোপাট করে চক্রের হাতে কৌশলে ছেড়ে দিয়েছিল অভয়াশ্রম। ফলে ওই চক্র সরকারি টাকায় অভয়াশ্রম তৈরি করে মাছ রক্ষার বদলে অবাধে মাছ লুট করতো। বর্তমানে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬টি, শান্তিগঞ্জে ৪টি, দোয়ারাবাজারে ৪টি এবং জগন্নাথপুরে ২টি অভয়াশ্রম রয়েছে। যেসব এলাকার মিঠাপানির মাছ সংকটে আছে এবং বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেসব এলাকায় অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করে তা পুনরুদ্ধারের জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এদিকে বিপুল বরাদ্দের অভয়াশ্রম প্রকল্প বন্ধ করার পর পরবর্তীতে ইজারাদারদের স্বার্থে আরেকটি অভিনব উদ্যোগ বাস্তবায়নে নেয় মৎস্য বিভাগ। ইজারাকৃত জলমহালের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয় ‘বিল নার্সারি’। যেখানে সরকারি টাকায় ছাড়া হয় মাছ এবং সরকারও প্রতি বছর বরাদ্দ দেয় এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে। তবে বাস্তবে সরকারি বরাদ্দ ব্যবহার হয়না বলে অভিযোগ আছে। ‘বিল নার্সারি’ স্থাপন প্রকল্পটিও হাওরে মাছ বৃদ্ধির জন্য নেওয়া হয়। জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি বিভিন্ন উপজেলায় বিল নার্সারি প্রতিষ্ঠা করে বাস্তবায়ন করে। এগুলো স্থাপন করা হয় ইজারাকৃত জলমহালের অভ্যন্তরে। প্রত্যেকটিতে প্রতি বছর সরকার ৩০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলায় গত অর্থ বছরে এরকম ৪৭টি বিল নার্সারি স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলোতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। একই ভাবে ১৫টি অভয়াশ্রমেও আরো ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এভাবে প্রতি বছরই বিল নার্সারি ও পুরনো অভয়াশ্রমে ৬০ হাজার টাকার করে বরাদ্দ দেওয়া হলে এই টাকায় কোনও কাজ হয় না। গত বছর শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার জাহিদ হাসান বিল নার্সারির বাৎসরিক বরাদ্দ কাজে না লাগিয়ে আত্মসাত করায় তৎকালীন জেলা মৎস্য অফিসার তাকে শোকজও দিয়েছিলেন। এভাবে অন্যান্য এলাকায়ও বিল নার্সারি ও অভয়াশ্রমের বরাদ্দ কাজে লাগানো হয়না বলে জানা গেছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশকর্মী রিপচান হাবিব বলেন, এসব প্রকল্প একেবারে ভুয়া। বিল নার্সারি মূলত ইজারাদারদের স্বার্থেই স্থাপন করা হয়। আর অভয়াশ্রমগুলোর মাধ্যমে জলাশয়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কথা থাকলেও অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হচ্ছে। সরকার যদি ইজারাদারদের লাগাম টেনে ধরতে পারে, মওসুমে জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ বন্ধ করতে পারে এবং বর্ষায় মশারি জাল দিয়ে মাছ আহরণ সাময়িক বন্ধ রাখতে পারে তাহলে হাওরে মাছের অভাব হবেনা। হাওর আন্দোলনের নেতা সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। মৎস্য বিভাগ এবং তাদের তৈরি দুষ্ট চক্র লাভবান হচ্ছে। এটা সুস্পষ্ট একটি দুর্নীতি। তিনি বলেন, হাওরে মাছ বৃদ্ধিতো দূরের কথা, এখন উল্টো হাওরে মাছ কমছে, মিঠাপানির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। অথচ অভয়াশ্রমের মাধ্যমে বিলুপ্ত ও সংকটাপন্ন প্রজাতি ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। শাল্লা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান লিটন বলেন, বিল-নার্সারি জলমহালের অভ্যন্তরেই করতে হয়। এতে সামান্য বরাদ্দ দেওয়া হয় মাছ ছাড়া, চুন দেওয়া ও বাঁশ কাটা দেওয়ার জন্য। এই অল্প বরাদ্দ দিয়ে কাজ করতে হয়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, রাজস্ব খাতের অল্প বরাদ্দ দিয়ে অভয়াশ্রম ও বিল নার্সারির কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এগুলো আরো বাড়ানো দরকার। তাহলে আরো বেশি সুফল মিলবে। বিল নার্সারি উপজেলা মৎস্য ব্যবস্থাপনা কমিটিই বাস্তবায়ন করে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত